তুহিন ফয়েজ ,মতলব চাঁদপুর প্রতিনিধি :
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার রসুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের উপর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির হামলা এমন তথ্য সম্প্রতি বিভিন্ন মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং শিক্ষকবৃন্দ মানববন্ধন করেন। কিন্তু প্রকৃত ঘটনায় জানা গেছে ভিন্ন তথ্য। এ বিষয়ে রহস্য উদঘাটনে অনুসন্ধানে জানা যায় আসল ঘটনা। সভাপতি নয় কাজী মানিক নামের এক বহিরাগত লোক শিক্ষককে ধাক্কা মেরেছে।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির খানের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ পেলে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা তার কাছ থেকে হিসাব চান। কিন্তু তিনি সঠিক হিসাব দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কাজী মোঃ মহিউদ্দিন জামান উপজেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৩ নভেম্বর তদন্ত করতে আসেন তিন সদস্য বিশিষ্ট সহকারি শিক্ষা অফিসারবৃন্দ। ঘটনার সময় তদন্ত কর্মকর্তাবৃন্দ ও সভাপতি পাশের রুমে ছিলেন। আরেক রুমে ঘটেছিল হাতাহাতির ঘটনা।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কাজী মোস্তাক মেম্বার বলেন, প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম সহ বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে আসলে তদন্ত কর্মকর্তা, সভাপতি ও আমি ছিলাম এক রুমে। আর পাশের রুমে ছিল প্রধান শিক্ষক ও এলাকার কিছু লোকজন। হঠাৎ করেই ওই রুমে হট্টগোল শুনে শিক্ষা অফিসার বেলায়েত হোসেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও আমি গিয়ে দেখি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সাথে এলাকার মানুষের কথা কাটা কাটি হচ্ছে। এবং জানতে পারি কাজী মানিক নামে জনৈক ব্যক্তি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ধাক্কা মেরেছে। তাৎক্ষণিক সভাপতি সহ আমরা ঘটনাটি সমাধান করতে চাইলে তিনি আইনের আশ্রয় নিবেন বলে জানিয়ে দেন।
প্রত্যক্ষদশী রসুলপুর গ্রামের মনির হোসেন বলেন, যথন তদন্ত চলছিল তখন সভাপতি সহ শিক্ষা অফিসারবৃন্দ এক রুমে তদন্ত করছিল। পাশের রুমে এলাকার মানুষের সাথে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের তর্ক বা হাতাহাতি হয়েছে। কিন্তু যে রুমে ঘটনা ঘটেছে ওই রুমে সভাপতি ছিলেন না। রিপন খান ও মোতালেব হোসেন বলেন, পাশের রুমে যখন তদন্ত চলছিল, তখন শিক্ষক হুমায়ুন খান এলাকার মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করায় কাজী মানিক তাকে ধাক্কা দিয়েছেন। কিন্তু কেউ তাকে গুরুতর আঘাত করেনি। শাহ আলম মৃধা বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন খানকে কাজী মানিক ধাক্কা দিয়েছে খারাপ আচরণ করায়।
সভাপতি একজন ভদ্র লোক তাকে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে ফাসানোর চেষ্টা করছে বলে আমি মনে করি।
১১ নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন খানের বাড়িতে গিয়ে তাকে বিছানায় শোয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। সেখানেই শিক্ষক হুমায়ুন কবির খান
সাংবাদিকদের সাথে বলেন, শিক্ষা অফিসে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত আসে। তদন্ত শুরু হওয়ার পূর্ব মুহুর্তেই কাজী মানিক নামের এক ব্যক্তি আমাকে আঘাত করে। তার পরেই আরো কয়েকজন আমাকে আঘাত করেছে, কিন্তু তাদের দেখতে পাইনি। এসময় আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।
এদিকে ঘটনার পরে শিক্ষক হুমায়ুন খানের মেয়ে সুমাইয়া ইসলাম সুইটি বাদী হয়ে ৬ জনকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করেন। এতে প্রধান আসামী করা হয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কাজী মোঃ মহিউদ্দিন জামানকে। আর ভিকটিম হুমায়ুন কবিরকে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছে। দ্বিতীয় সাক্ষী করা হয়েছে স্কুল থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দুরে পূর্ব ফতেপুর গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে শরিফ দেওয়ানকে। সাক্ষী শরিফ বলেন, ঘটনার পর আমি ওখানে গিয়ে দেখি, শিক্ষক হুমায়ুন কবিরকে নিয়ে হইহুল্লো করছে কিছু লোক ৷তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে নিকটস্থ সাহেব বাজারে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। এই মামলায় সাক্ষী হওয়ার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেনা। সাংবাদিকদের সামনেই হুমায়ুন খানের শ্যালিকা শান্তাকে মোবাইল ফোনে কল করে জানতে চায় শরিফ আমাকে না জানিয়ে কেন মামলার সাক্ষী দিলেন ? মুঠোফোনেই উত্তরে শান্তা শরিফকে বলেন তুমি সাংবাদিকদেরকে কোন বক্তব্য দিও না।
চার নম্বর সাক্ষী ঠেটালিয়া গ্রামের সফিকুল ইসলামের স্ত্রী রাবেয়া বেগম এ ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি। মামলা পাঁচ নম্বর সাক্ষী নুরে আলম কাজী বলেন, তদন্ত চলাকালীন সময়ে অন্য রুমে কে বা কাহারা প্রধান শিক্ষকের সাথে তর্ক হলে ঠেলা ধাক্কা দিয়েছেন। আমরা পরে জানতে পেরেছি কাজী মানিক তাকে ধাক্কা দিয়েছে। ওই রুমে সভাপতি ছিলেন না, তাকে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে একটি মহল।
মুঠোফোনে একই বক্তব্য দিলেন ছয় নম্বর সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা সলিম উল্লা। তিনি বলেন, আসলে সভাপতি প্রধান শিক্ষকের উপর হাত তোলেন নি। এলাকার মানুষের সাথে কথা কাটা কাটি হলে কাজী মানিক তাকে ধাক্কা মেরেছে।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কাজী মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন যাবৎ আর্থিক অনিয়ম করে আসছেন। ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। ওই অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন পাশের রুমে হাল্লা চিল্লা শোনা যাচ্ছিল। পরে শিক্ষা অফিসার সহ আমরা গিয়ে দেখি কে বা কারা তাকে ধাক্কা মেরেছে। পরে আমরা যখন জানতে পেরেছি কাজী মানিকের সাথে তার হাতাহাতি হয়েছে তখন ঘটনাটি সমাধান করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাজি হননি। পরে তিনি আমার নামসহ এলাকার কিছু নির্দোষ মানুষকে জড়িয়ে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সহকারি শিক্ষা অফিসার বেলায়েত বলেন, তদন্ত করতে স্কুলে গেলে প্রথমে একটি কক্ষে আমরা অবস্থান করি। ওই রুমে এলাকার অনেক লোকজন জড়ো হওয়ায় আমরা সভাপতি সহ অন্য আরেকটি রুমে গিয়ে বসি। সেখানে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করার পূর্ব মুহুর্তেই ওই রুম থেকে হইহুল্লো শোনে আমরা গিয়ে শুনি কে বা কাহারা প্রধান শিক্ষকের উপর হাত তুলেছে।
পুর্ব পরিকল্পিতভাবে উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন বলে স্থামীয় সাংবাদিকদেরকে জানান, রসুলপুর গ্রামের জনগণ ৷
এমন অবস্থায় স্কুলটির শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে মনেকরে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধানের দাবী জানিয়েছেন ওই এলাকার সর্বস্তরের জনগণ।
প্রধান শিক্ষকের আর্থিক অনিয়মসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে
পরবর্তী সংবাদে থাকছে বিস্তারিত ৷
পরিচালনা পরিষদ:
সম্পাদক: আমিনুল ইসলাম আমিন তপদার
সহ-সম্পাদক রুবেল শিকদার
জুনিয়র সহ-সম্পাদক: নাজমুল হাসান
মামুন
উপদেষ্টা মন্ডলীর সভাপতি: কাজী
হাবিবুর রহমান
মোঃ নুরুল হক সরকার(উপদেষ্টা)
মেহেদী হাসান স্বপন (উপদেষ্টা)
জসিম উদ্দিন তপদার (উপদেষ্টা)
উপদেষ্টা সাংবাদিক তুহিন ফয়েজ
হাজী আবুল হোসেন(উপদেষ্টা)
বার্তা সম্পাদক:আবু কাউছার আহমেদ
প্রকাশক: এডিটর: রাহুল