নাজমুল এইচ খান, শৈলকূপা ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহের শৈলকূপায় চিকিৎসা অবহেলার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন এক মানবিক স্বেচ্ছাসেবী যুবক মেহেদী হাসান হৃদয়।
১৪ অক্টোবর সোমবার সকালে তার মৃত্যুতে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক সংগঠনের উদ্যোগে কবিরপুর মোড় এলাকায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেয় শতাধিক তরুণ-তরুণী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। সবার হাতে প্ল্যাকার্ড— “হৃদয়ের মৃত্যুর বিচার চাই”, “অবহেলার চিকিৎসা নয়”, “হাসপাতালের দায়ীদের বিচারের আওতায় আনো” ইত্যাদি শ্লোগান সম্বলিত লেখা।
“যে ছেলেটি নিজের রক্ত দিয়ে মানুষ বাঁচাত, সে নিজে বাঁচল না!”
মানববন্ধনে বক্তারা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন—
হৃদয় ছিল আমাদের সমাজের এক উজ্জ্বল মানবিক মুখ। সে অসুস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়াত, রক্ত দিত, রোগীদের জন্য ছুটে যেত। অথচ সেই হৃদয় আজ মারা গেল চিকিৎসকদের অবহেলায়! এটা শুধু এক জনের মৃত্যু নয় — এটা পুরো ব্যবস্থার ব্যর্থতা।”
কীভাবে ঘটলো হৃদয়ের মৃত্যু?
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১২ অক্টোবর রাতে হৃদয়কে একটি কালাচ সাপ দংশন করে। রাতেই তাকে শৈলকূপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
কিন্তু অভিযোগ রয়েছে — কর্তব্যরত চিকিৎসকরা প্রথমেই সাপের ধরণ চিনতে ব্যর্থ হন এবং যথাসময়ে এন্টিভেনম ইনজেকশন প্রয়োগ করেননি।
ফলে হৃদয়ের শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। পরে তাকে কুষ্টিয়া হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও ততক্ষণে দেরি হয়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।
স্থানীয়দের দাবি, হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসক না থাকায় প্রায়ই এমন অবহেলার ঘটনা ঘটে থাকে, কিন্তু কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
হাসপাতালজুড়ে অনিয়মের সিন্ডিকেট!
মানববন্ধনে বক্তারা আরও অভিযোগ তোলেন যে, শৈলকূপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে চলছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি।
তারা বলেন—
“এখানে ডাক্তার সংকট রয়েছে। অথচ যারা আছেন, তারা সকাল বেলা সরকারি দায়িত্বে এসে মাত্র কিছু সময় কাজ করে, পরে নিজের ক্লিনিক বা পছন্দের ক্লিনিকে রোগী পাঠান। হাসপাতালের ভেতরেই কেউ কেউ চেম্বার খুলে বসেছেন। রোগীদের টেস্ট সেগুলো তাদের পছন্দের ক্লিনিকে করানো হয়, আর এর বিনিময়ে মোটা অঙ্কের কমিশন পান। এমনকি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছ থেকেও অর্থ লেনদেন চলে।”
তাদের দাবি, আগে যেখানে ফ্রি প্রসূতি সেবা ও সিজার অপারেশন সপ্তাহে দুই দিন হতো, সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয় “অজ্ঞান করার ডাক্তার নেই”, অথচ একই ডাক্তাররা বাইরে ক্লিনিকে গিয়ে নিজেই সিজার ও অজ্ঞান দুটো কাজই করছেন!
মানববন্ধনে তরুণদের শপথ
মানববন্ধনে উপস্থিত তরুণ সমাজ এক কণ্ঠে বলেন—
“আমরা নীরব থাকব না। হৃদয়ের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত চাই। যারা দায়িত্বে অবহেলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।”
তারা আরও বলেন,
“সরকারি হাসপাতাল মানেই এখন গরিবের অসহায়ত্বের প্রতীক হয়ে গেছে। এই অবস্থা চলতে পারে না। আমরা চাই, শৈলকূপা হাসপাতালকে প্রকৃত অর্থে গরিব মানুষের আশ্রয়স্থল হিসেবে পুনর্গঠন করা হোক।”
এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া
হৃদয়ের মৃত্যুতে গোটা শৈলকূপা উপজেলা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে লিখছেন—
“হৃদয় ছিল জীবন্ত মানবিকতার প্রতিচ্ছবি। এমন ছেলে হারানো শুধু এক পরিবারের নয়, পুরো সমাজের ক্ষতি।”
বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মীরা জানাচ্ছেন, হৃদয় ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ রক্তদাতা ও সমাজসেবী। বিভিন্ন সময় তিনি অসুস্থ মানুষকে রক্ত দিয়ে, সহায়তা করে পাশে দাঁড়িয়েছেন। অথচ আজ সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে তিনি নিজেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন।
তদন্তের দাবি
মানববন্ধনে বক্তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের কাছে দাবি জানান—
১. হৃদয়ের মৃত্যুর ঘটনায় অবহেলার তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক।
২. সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হোক।
৩. হাসপাতালের সিন্ডিকেট ও ক্লিনিক বাণিজ্য বন্ধ করা হোক।
৪. হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করা হোক।
পরিচালনা পরিষদ:
সম্পাদক: আমিনুল ইসলাম আমিন তপদার
সহ-সম্পাদক রুবেল শিকদার
জুনিয়র সহ-সম্পাদক: নাজমুল হাসান
মামুন
উপদেষ্টা মন্ডলীর সভাপতি: কাজী
হাবিবুর রহমান
মোঃ নুরুল হক সরকার(উপদেষ্টা)
মেহেদী হাসান স্বপন (উপদেষ্টা)
জসিম উদ্দিন তপদার (উপদেষ্টা)
উপদেষ্টা সাংবাদিক তুহিন ফয়েজ
হাজী আবুল হোসেন(উপদেষ্টা)
বার্তা সম্পাদক:আবু কাউছার আহমেদ
প্রকাশক: এডিটর: রাহুল