আব্দুল মান্নান, ভাঙ্গা(ফরিদপুর)প্রতিনিধি-
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এনজিওর কিস্তির টাকা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে ৬ পুলিশ ও এনজিও কর্মী সহ ১২ জন আহত হয়েছে। শনিবার (২ মার্চ) রাতে ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের সুয়াদী গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশের উপর হামলার সংবাদ পেয়ে ভাঙ্গা সার্কেল এডিশনাল এসপি, ভাঙ্গা থানার ওসি সহ পুলিশের ২টি টিম ঘটনা স্থলে গিয়ে আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা হাসপাতালে চিকিৎসা দেন। এলাকার পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত আছে।
আহতরা হলেন, ভাঙ্গা থানার পুলিশের এস,আই মোঃ সিরাজুল ইসলাম, এস,আই মোঃ মনিরুল ইসলাম, কনস্টেবল লিটু শেখ, কনস্টেবল মুরাদ হোসেন, কনস্টেবল জাহিদ, কনস্টেবল ফারুক, পল্লী প্রগতি সহায়ক সমিতির ভাঙ্গা শাখার ম্যানেজার আক্তার হোসেন, মাঠ কর্মী মোঃ আবুল হাসান সহ ৫ জন এবং সন্তান সম্ভবা এক নারী । আহত ৬ পুলিশ সহ আরো ৬ জন ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
এ বিষয় ভাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মামুনুর আল রশিদ জানান, পল্লী প্রগতি সহায়ক সমিতির ইউনিট ম্যানেজার আকতার হোসেন সহ তার ৬ জন কর্মীকে মারধর করেছে মর্মে ভাঙ্গা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়। তার অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েকজন পুলিশ রাতে সুয়াদী গ্রামে তদন্তে সরেজমিনে যায়।
তখন পুলিশের তদন্তের কাজে বাধা দিয়ে একটি চক্র বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য গ্রামবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। পরে উত্তেজিত জনতা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় পুলিশের দুই এসআই ও চারজন কনস্টেবল আহত হয়।
এব্যাপারে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ তানভির আহমেদ জানান, রাতে দুইজন এসআই ও ৪ জন পুলিশের কনস্টেবল হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের শরীরের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এর আগে দুপুরে আরো ৫ এনজিও কর্মী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন এনজিও কর্মী ও সুয়াদী গ্রামের একজন সন্তান সম্ভাবা নারী হাসপাতালে ভর্তি আছে ।
এব্যাপারে পল্লী প্রগতি সহায়ক সমিতির ইউনিট ম্যানেজার আকতার হোসেনের একটি লিখিত অভিযোগ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল ১১টার দিকে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার সহ পাঁচজন কিস্তির পাওনা টাকা আদায় করার জন্য আলগী ইউনিয়নের সুয়াদী গ্রামের তারা মিয়ার বাড়িতে যায়। তারা মিয়া বাড়িতে না থাকায় তার মোবাইলে কিস্তির টাকার জন্য যোগাযোগ করা হয়। এ সময় মোবাইলে কিস্তির পাওনা টাকা নিয়ে ২জনের মধ্য কাটাকাটি ও অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে আকতার ফোন কেটে দিয়ে অফিসের সবাইকে নিয়ে তারার বাড়ি থেকে ভাঙ্গা অফিসের উদ্দেশে রওনা হন। পথিমধ্যে তারা মিয়া সহ তার সহযোগী ৮/ ১০ জন যুবক আকতার হোসেন ও তার কর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং স্টাফদের কাছে থাকা প্রায় দুই লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা। পরে এনজিও কর্মীদের ডাক চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন। তাদেরকে উদ্ধার করে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়। এ ঘটনা নিয়ে ভাঙ্গা থানায় গিয়ে অভিযোগ দেন আকতার হোসেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার রাতে পুলিশ তারা মিয়ার বাড়িতে যায়। তখন তারা মিয়াকে পুলিশ ধরে আনার চেষ্টা করলে তারামিয়া দৌড়ে পালিয়ে যায়। তখন তারামিয়ার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী কনি বেগম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়েন। তখন গ্রামবাসী আবার মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে কনি বেগম স্ট্রোকে মারা গেছেন। -এমন বিভ্রান্তিকর তথ্য আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে গ্রামের শতাধিক মানুষ উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। এতে পুলিশের দুইজন এসআই ও কনস্টেবলসহ ছয় পুলিশ আহত হয়।
এঘটনায় আলগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ম. ম সিদ্দিক মিয়া জানান, রাতেই শুনেছি ঘটনাটি খুবই দুঃখ জনক। যাহারা পুলিশের উপর হামলা করেছে এবং এনজিও কর্মীদের মারধর করেছে, তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়া হোক।
আহত ভাঙ্গা থানার এসআই মনিরুল ইসলাম জানান, তারামিয়া একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে চুরি-ছিনতাই সহ বিভিন্ন অপরাধের একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে ধরতে গিয়ে আমাদের উপর গ্রামবাসী হামলা চালায়।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা সার্কেল এডিশনাল এস,পি তালাশ মাহমুদ শাহানশাহ জানান,
পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
০৩/০৩/২০২৪
০১৭২৯০৩৮৭০০
Leave a Reply