জলিলুর রহমান জনি, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ পৌর শহরের উলিপুর ব্রিজ এলাকায় বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকালটা ছিল অন্য দিনের মতোই। হাটে যাওয়ার ব্যস্ততা, রাস্তায় মানুষের আনাগোনা—সবই স্বাভাবিক। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই এক ভয়াবহ শব্দে স্তব্ধ হয়ে যায় এলাকা। গরু বোঝাই একটি ভটভটির সঙ্গে অটোরিকশার সংঘর্ষে মুহূর্তেই ঝরে যায় দুইটি প্রাণ—অটোরিকশা চালক হাইফোত হোসেন (৪৫) ও শিশু জনি (১২)।
নিহত হাইফোত হোসেন ছিলেন কোহিত গ্রামের মৃত বাহাদুর আলীর ছেলে। তিনি পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। প্রতিদিনের মতো সেদিনও ভোরে বেরিয়েছিলেন জীবিকার খোঁজে। তার রিকশায় যাত্রী হিসেবে উঠেছিল জনি, তাড়াশ পৌর এলাকার দক্ষিণপাড়া মহল্লার রফিকুল ইসলামের ছেলে। স্কুলে যাওয়ার আগেই দুর্ঘটনার শিকার হয় সে।
স্থানীয়রা জানান, সকালে গরু বোঝাই ভটভটিটি দ্রুতগতিতে নওগাঁ হাটের দিকে যাচ্ছিল। উলিপুর ব্রিজ এলাকায় পৌঁছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অটোরিকশাকে সজোরে ধাক্কা দেয়। মুহূর্তেই ছিটকে পড়ে যান চালক ও যাত্রী। ঘটনাস্থলেই তারা গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা দৌড়ে এসে দুজনকে উদ্ধার করে তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
দুর্ঘটনার পরপরই এলাকাজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। নিহত শিশুর পরিবার কান্নায় ভেঙে পড়েছে। শিশুর মা বারবার বলছিলেন, “সকালেই স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আর ফিরল না আমার সোনা।”
তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউর রহমান জানান, “গরু বোঝাই ভটভটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।”
এমন দুর্ঘটনা নতুন নয়। অপ্রত্যাশিতভাবে তৈরি হওয়া এসব ভটভটি (অবৈধ ট্রাক্টরভিত্তিক যান) প্রতিদিনই মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। লাইসেন্সবিহীন, অননুমোদিত এই যানগুলো গ্রামীণ সড়কে অবাধে চলাচল করছে। অথচ নিয়মিত মনিটরিং বা আইন প্রয়োগের অভাবে প্রতিনিয়ত ঘটছে প্রাণহানি।
স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসনের আরও কঠোর নজরদারি ও সচেতনতা কার্যক্রমের মাধ্যমে এসব অননুমোদিত যান চলাচল বন্ধ করা দরকার। নইলে এভাবেই ঝরে যাবে নিরীহ মানুষের প্রাণ, আর নিভে যাবে আরও অনেক পরিবারের স্বপ্ন।