অনলাইন ডেস্ক : হাজীগঞ্জের বাকিলা মডেল ইউনিয়ন ও স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় পৌরসভাধীন বলাখাল গ্রামের সন্তান সম্ভবা ৩০ বছর বয়সি হোসনেয়ারাকে। গত শনিবার (২৬ এপ্রিল) তার প্রসব ব্যথা উঠলে নিয়ে যাওয়া হয় বাকিলা মডেল ইউনিয়ন ও স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে। ওই দিন বেলা তিনটার দিকে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা শাহনাজ বেগমের মাধ্যমে তিনি পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেন।
এর কিছু সময় পর তিনি লেবার রুম থেকে বের হয়ে বলেন, শিশুটিকে (নবজাতক) একজন শিশু বিশেষজ্ঞ এবং মা হোসনেআরাকে ডাক্তার দেখাতে হবে। আপনারা দ্রুত তাদেরকে চাঁদপুরে নিয়ে যান। তাঁর কথা মতো চাঁদপুরে নেওয়া হলো, কিন্তু হোসনেআরা বেগমের শারিরিক অবস্থার অবনতি।
চিকিৎসক জানালেন, যত দ্রুত সম্ভব তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। দেরী না করে কুমিল্লায় নেওয়ার পর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, তিনি আর নেই। অর্থ্যাৎ হোসনেআরা বেগম মারা গেছেন।
মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো ভাই আব্দুর রহমান গাজী ও স্বামী আবুল হাসেমের মাথায়। কি হবে, হোসনেআরা বেগমের নবজাতক ছেলে ও তিন কন্যা সন্তানসহ অবুঝ চার সন্তানের ? কার ভুলে মারা গেলেন তিনি ? ভুল চিকিৎসকা, নাকি অবহেলা ? নাকি ভাগ্যের নির্মম পরিহাস?
এই প্রশ্ন এখন নিহতের পরিবারের সদস্যসহ নিকট আত্মীয়-স্বজন, স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝে। স্থানীয়রা বিষয়টি সংবাদকর্মীদের জানালে কথা হয় আবদুর রহমান গাজীর সাথে। তিনি বলেন, আমার বোনের কোন সমস্যা ছিলো না। সে সম্পুর্ণ সুস্থ ছিলো। চাঁদপুরে ডাক্তার বলেছেন, বাচ্চা যেখানে হয়েছে, সেখানো কোন সমস্যা হয়েছে।
এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার বোনের ৩ মেয়ের পর ছেলে হয়েছে। শাহনাজ বেগমের অবহেলায় আর ভুল চিকিৎসার কারণে আমার বোন মারা গেছে। এখন বোনর চারটি অবুঝ বাচ্চার কি হবে? আমরা তার বিচার চাই।
হোসনেআরা’র স্বামী আবুল হাসেম জানান, বারে বারে বলার পরেও তিনি (পরিবার কল্যাণ পরিদর্শীকা শাহনাজ বেগম) বলেছেন, আমার স্ত্রী ভালো আছে। কোন সমস্যা নেই। তাহলে কেন আমার স্ত্রী মারা গেলো। এখন আমি এই চার অবুঝ শিশু নিয়ে কোথায় যাবো?, কি করবো? আমি এই ডাক্তারের (শাহনাজ বেগম) বিচার চাই।
হোসনেআরা’র মা পারুল বেগম বলেন, আমার ৫ ছেলে, ১ মেয়ে। অনেক আদর করে মেয়েকে লালন-পালন করেছি। ডাক্তার (শাহানাজ বেগম) আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে। ডাক্তারকে বলেছি, আমার মেয়েকে হাজীগঞ্জ নিয়ে যাই। তিনি বলেছেন, কোন সমস্যা নাই। তাহলে, আমার মেয়ে মরলো কেন? এখন আমার চার নাতি-নাতিনের কি হবে?
হোসনেআরা’র শাশুড়ী বলেন, আমার ছেলের বৌ’র (পুত্রবধূ) সব ঠিক ছিলো। ডাক্তার অনেকগুলো ইনজেকশান দিয়েছে। সে হোসনেআরারে মাইরা লাইছে।
কথা হয় বাকিলা ইউনিয়ন ও স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা শাহনাজ বেগমের সাথে। তিনি বলেন, সব কিছুই ঠিক ছিলো। বাচ্চা প্রসব হওয়ার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হলে, তাকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে রেফার করি। এরপর কি হয়েছে, আমি জানি না।
রোগীর পরিবার বার বার আপনাকে ফোন দিয়েছে, কিন্তু আপনি কেন ফোন রিসিভ করেন নি ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ঘুমে ছিলাম। (রোগীর পরিবারের দাবি অর্ধশতবার ফোন দেওয়া হয়েছে)
এ বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মফিজুর রহমান জানান, শাহনাজ বেগম বিষয়টি গতকাল (রবিবার) আমাকে জানিয়েছে। তিনি বলেন, আমদের প্রসব পরবর্তী যে চিকিৎসা দেয়ার নিয়ম। তা, তিনি করেছেন। তবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বিষয়টি টেকেল (সামলাতে) দিতে পারেনি। এমন কেইস খুব কমই হয়। বিষয়টি আমি আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে (ডিডি) জানিয়েছে।
Leave a Reply