অপি মুন্সী : শিবচর ( মাদারীপুর)
জেলা প্রশাসনের অসহযোগিতা ও খামখেয়ালির কারণে ডাল গবেষণার ১৬৮ কোটি টাকার মাদারীপুর ডাল প্রকল্প ভেস্তে যাচ্ছে। ভূমি অধিগ্রহণের সব প্রক্রিয়া শেষ করে জমির মূল্য বাবদ ৯৬ কোটি টাকা জেলা প্রশাসককে দিলেও ডাল গবেষণা কর্তৃপক্ষ দুই বছরেও বুঝে পাননি অধিগ্রহণের জমি।
প্রকল্প পরিচালক বারবার জেলা প্রশাসকের কাছে ধরনা দিয়েও কোনো সুরাহা পাননি। ২০২৬ সালে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা, অথচ জেলা প্রশাসকের অসহযোগিতার কারণে মেয়াদের মধ্যে প্রকল্প শেষ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ২০০৫ সালে ২০.৫০ একর জমির ওপর প্রয়োজনীয় অবকাঠামো করে শুরু হয় আঞ্চলিক ডাল গবেষণা কেন্দ্রের কার্যক্রম। শুরু থেকেই মুসরি, খেসারি, মটর, মুগ, মাষকলাই ডাল নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। এ পর্যন্ত গবেষণা করে মুসরির ৮টি জাত, খেসারির ৬টি জাত ও বাড়ি মটরের ৩টি জাত উদ্ভব করেছে।
জলবায়ু উপযোগী রোগ প্রতিরোধি সহশীল ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ডাল চাষ করে যেমন হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে তেমনি ডাল উৎপাদন বেড়েছে অনেকগুণ।
আরও অধিকতর গবেষণার জন্য আধুনিক ল্যাব ভবন, পরীক্ষামূলক ডাল চাষের জমি ও যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ২০২১ সালে মাদারীপুর ডাল উৎপাদন বৃদ্ধি নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। এজন্য ডাল গবেষণা কেন্দ্রের পাশে ৩০ একর জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১৬৮ কোটি টাকা।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসন ও প্রকল্প কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে ভূমি অধিগ্রহণের জমি, স্থাপনা, গাছপালা, ফসলসহ সব ধরনের যাচাই-বাছাই করে ক্ষতিপূরণের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর ২০২৩ সালে জেলা প্রশাসককে জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের প্রায় ৯৬ কোটি টাকা দিয়ে দেয় প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। টাকা দেওয়ার দুই বছর কেটে গেলেও এখন পর্যন্ত অধিগ্রহণের জমি প্রকল্প পরিচালককে বুঝিয়ে দিতে পারেনি জেলা প্রশাসন।
দীর্ঘদিন ধরে জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা জমি মালিকদের দেওয়া বন্ধ রেখেছে জেলা প্রশাসন। তাই জমির মালিকরা জমি ছাড়ছে না। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। এজন্য শুধু ডাল গবেষণা কেন্দ্র টাকা না দেওয়ায় শিবচরের মেগা প্রকল্প হাইটেক পার্কেরও কাজ বন্ধ করে দেয় জমির মালিকরা। এতকিছুর পরও নির্বিকার জেলা প্রশাসন। প্রকল্পের কাজ হোক বা না হোক তাতে যেন তাদের কিছু আসে যায় না। সঠিক সময় ডাল গবেষণার অধিগ্রহণকৃত জমি জেলা প্রশাসন বুঝিয়ে দিলে এতদিন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যেতো।
অন্যদিকে এ প্রকল্প দেরি হওয়ায় এরই মধ্যে বাজেট কমানোর চিন্তা করছে সরকার। বাজেট কামানোর প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু করেছে বলে নিশ্চিত করছে একটি সূত্র। এখনও যদি জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয় তাহলে মেয়াদের মধ্যে অনেকখানি এগিয়ে নেওয়া যাবে প্রকল্পের কাজ। তবে এ জমি বুঝিয়ে দিতে আরও দেরি করলে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে এ প্রকল্পের কাজ।
প্রকল্প পরিচালক ও মাদারীপুর ডাল গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক ড. সেলিম আহম্মেদ বলেন, মাদারীপুর ডাল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পটির মেয়াদ আগামী বছর শেষ হয়ে যাবে। অথচ এখন পর্যন্ত আমরা জমিই বুঝে পাইনি। আমরা জমির নির্ধারিত মূল্য জেলা প্রশাসক বরাবর দিয়ে দিয়েছি। আমি একাধিকবার চিঠি দিয়ে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছি। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবেও একাধিকবার জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়ে অনুরোধ করেছি; কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান পাইনি।
জেলা প্রশাসক মোছা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ডাল গবেষণার যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তা নিয়ে একটু জটিলতা দেখা দিয়েছে। জমির কিছু মূল মালিক জমির মূল্য কম নির্ধারণ করা হয়েছে মর্মে আবেদন করেছে। আমরা সে আবেদন মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে কোন নির্দেশনা আসেনি। আমি নিজেও মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করেছি। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ পর্যায় তাও তাদের জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা এলে সেভাবেই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।