অপু দাস, রিপোর্টার রাজশাহী
শারদীয় দুর্গোৎসবের আনন্দ-উল্লাস আর ঢাক-উলুধ্বনির মাঝেই আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহীর মণ্ডপগুলোতে বেজে উঠেছে বিদায়ের সুর। মহাষ্ঠমীর পূজা, মহানবমীর অঞ্জলি আর রাতভর আরতির পর দশমীর সকালে পূজার মণ্ডপগুলোতে যেন নেমে এসেছে এক গভীর আবেগঘন পরিবেশ। দেবী দুর্গার বিদায়, ভক্তদের হৃদয়ে রেখে গেছে অপার শূন্যতা।
রাজশাহীর সাহেববাজার, বোয়ালিয়া, লক্ষ্মীপুর, মালোপাড়া, রাজপাড়া, বাগমারা থেকে শুরু করে জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মণ্ডপগুলোতে আজ সকাল থেকেই ভক্ত-শুভানুধ্যায়ীরা ভিড় জমিয়েছেন। দেবীকে সিঁদুর পরানো আর অঞ্জলির দৃশ্যে অনেক নারীর চোখ ভিজে উঠেছে অশ্রুজলে। কারও ঠোঁটে প্রার্থনা— “মা আবার এসো, আগামী বছর আনন্দে মর্ত্যে ফিরে এসো।”
দশমী মানেই শুধু প্রতিমা বিসর্জন নয়, এর সঙ্গে মিশে আছে আবেগ, মিলন আর বিদায়ের রীতি। সকালে পূজা শেষে নারীরা একে অপরের কপালে সিঁদুর পরিয়ে বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। মণ্ডপে মণ্ডপে কোলাকুলির দৃশ্য যেন ভক্তদের হৃদয়ের টানকে আরও ঘন করেছে।
বিকেলের পর থেকেই রাজশাহীর পদ্মার ঘাট ও বিভিন্ন জলাশয়ের দিকে দেবীর বিসর্জন শোভাযাত্রা শুরু হবে। ঢাক-ঢোল, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি আর ভক্তদের নাচ-গানের মধ্য দিয়ে প্রতিমা বিদায়ের আয়োজন চলছে। সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট থেকে শুরু করে নগরীর বিভিন্ন সড়ক দিয়ে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিসর্জন স্থলে।
রাজশাহী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী জয়িতা দাস বললেন, “দুর্গাপূজা মানেই আমাদের আনন্দের উৎসব। কিন্তু শেষ দিনে সব আনন্দের সঙ্গে মিশে যায় বিষাদের ছায়া। মনে হয় মা যেন সত্যিই আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।”
অন্যদিকে বাগমারার পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি জানান, “আমরা সারা বছর অপেক্ষা করি এই কয়েকটা দিনের জন্য। কিন্তু মা চলে গেলে মনে হয় ঘরে শূন্যতা নেমে আসে।”
শহরজুড়ে বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। পদ্মা নদীর ঘাটে বিসর্জনের জন্য করা হয়েছে বিশেষ প্রস্তুতি। রাজশাহী মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিটি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা ও নিরাপত্তা টিম ছিল।
মণ্ডপে প্রতিমার সামনে শেষবারের মতো প্রণাম করে অনেকেই প্রতিজ্ঞা করেছেন, আগামী বছর আরও সুন্দরভাবে দুর্গোৎসবকে বরণ করবেন। পূজার শেষ প্রহরে ভক্তরা একস্বরেই বলছেন—
“আসছে বছর আবার হবে, মা আসবে নতুন আনন্দে।”
রাজশাহীর আকাশে তাই আজ উৎসবের সঙ্গে মিশেছে বিদায়ের সুর। ঢাকের বোল যেন একদিকে আনন্দের সমাপ্তি, অন্যদিকে নতুন প্রত্যাশার ডাক।